ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ , ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পৃথিবী খুঁড়ে নিচে যাওয়ার চেষ্টা, করা হলো ৩২ হাজার ফুট গর্ত

ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় : ১১-১২-২০২৪ ০৯:৩৪:১১ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১১-১২-২০২৪ ০৯:৩৪:১১ অপরাহ্ন
পৃথিবী খুঁড়ে নিচে যাওয়ার চেষ্টা, করা হলো ৩২ হাজার ফুট গর্ত
ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে ৩২ হাজার ফুট গর্ত খুঁড়ছে চীন। পৃথিবীর জমিন থেকে সোজা সেই গর্ত চলে গেছে গভীরে। এমনি এমনি এই কাজটি করছে না চীন। এর পেছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক কারণ। 
জানলে অবাক হবেন, সাধারণ শ্রমিক দিয়ে এই গর্ত খোড়া হচ্ছে। কাজটি করছেন চীনের খ্যাতনামা বিজ্ঞানীরা। তারা নেমেছেন মাঠে। পৃথিবীর গভীরে ১০ হাজার মিটার (৩২ হাজার ৮০৮ ফুট) গর্ত খনন শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা এই দেশের সবচেয়ে গভীরতম খননকার্য হতে চলেছে। কেন এত লম্বা সুড়ঙ্গ খোদাইয়ের কাজ? এত গভীরে গর্ত খুঁড়ে যাওয়া হবেটাই বা কোথায়?
শিলার ১০টি স্তরের মধ্য দিয়ে গর্ত খনন করে, বিজ্ঞানীরা আসলে ক্রিটেসিয়াস যুগের শিলার কাছে পৌঁছানোর আশা করছেন। এই স্তরটি বিজ্ঞানের ভাষায় ক্রিটেসিয়াস সিস্টেম নামে পরিচিত, আর এই শিলার বয়স ১৪৫ মিলিয়ন বছর।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই গর্ত খোঁড়ার প্রকল্পটি খনিজ সম্পদ শনাক্ত করার পাশাপাশি ভূমিকম্প এবং অগ্ন্যুৎপাতের মতো পরিবেশগত ঝুঁকি বুঝতে ও তার মূল্যায়নেও সাহায্য করতে পারে।
গর্তটি যে ভয়ানক গভীর তা নিয়ে নতুন করে বলার নেই কিছুই। তবে বাড়াবাড়ি রকমের গভীর হলেও এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে গভীরতম মানবসৃষ্ট গর্ত তা বলা যাবে না। মানুষের সৃষ্টি করা গভীরতম গর্তটি রয়েছে রাশিয়ায়। উত্তর-পশ্চিম রাশিয়ার কোলা উপদ্বীপের কোলা সুপারডিপ বোরহোল হচ্ছে পৃথিবীর গভীরতম গর্ত। 
প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল ১৯৭০ সালের ২৪ মে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরেও কাজ চলেছে। গর্তের গভীরতম শাখাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১,০৩৪ মিটার (৩৬,২০১ ফুট) নীচ অবধি প্রসারিত।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, পৃথিবীর নিচের গভীর শিলাগুলো তাদের প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশিই আর্দ্র। বোরহোলটি খুঁজে পাওয়ার আগে বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন যে, পানি মনে হয় এত গভীরে অবস্থিত পাথরে প্রবেশ করবে না। তারা মহাদেশের গ্রানাইটের নিচে ব্যাসাল্ট পাথরের একটি স্তর খুঁজে পাওয়ার আশাও করেছিল, কারণ এটিই সামুদ্রিক ভূত্বকের মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল। পরিবর্তে, বিজ্ঞানীরা দেখেন আগ্নেয় গ্রানাইটের নিচে রূপান্তরিত গ্রানাইট রয়েছে। যেহেতু মহাদেশীয় ভূত্বক গ্রানাইটের তৈরি, এটিই ছিল প্লেট টেকটনিকসের বড় প্রমাণ। প্লেট টেকটনিক তত্ত্বটি তখন সবে দানা বাঁধতে শুরু করেছে, সেই সময়ই ওই বোরহোল খনন শুরু।
পৃথিবীর গভীর অবধি খনন করা এত সহজ নয়। ১৯৬০-এর দশকে আমেরিকার একটি দল সমুদ্রতলের নিচে ১৮৩ মিটার (৬০০ ফুট) গভীরে পৌঁছেছিল। অব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক সমস্যার কারণে প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যায়। তবে, তারা দেখেন সামুদ্রিক ভূত্বকের উপরের ১৩ মিটার অবধি ব্যাসাল্ট শিলাই রয়েছে।
আসলে, এভাবে ড্রিলিং করা বেশ সমস্যার। পৃথিবীর ভূত্বক সততই পরিবর্তনশীল। গড়ে এই ভূত্বক প্রায় ৩০ কিলোমিটার পুরু। যদিও পর্বতশ্রেণির নিচে তা ১০০ কিলোমিটারও হয়ে যেতে পারে। পৃথিবীর আস্তরণ ভেদ করে আরও আরও গভীরে যাওয়া তাই এত সোজা নয়। তবু, চীনের এই গভীরতম গর্ত যদি ক্রিটেসিয়াস যুগের শিলার কাছে পৌঁছে দেয় বিজ্ঞানী ও গবেষকদের, তা নির্দ্বিধায় এক বড় অগ্রগতি বিজ্ঞানের।

বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ